ভারতে যেভাবে আলোচনার ‘ঝড়’ তৈরি করেছে ইলন মাস্কের ‘গ্রক’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-কে কাজে লাগিয়ে যেসব চ্যাটবট তৈরি করেছে বিভিন্ন টেক কোম্পানি, এগুলোর কাছে নানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেন ব্যবহারকারীরা। কোনো একটা প্রশ্ন করার পর ইন্টারনেটে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে একটা উত্তর দেয় এসব অ্যাপ। তবে উত্তর দেওয়ার সময় যদি ঠাট্টা করারও চেষ্টা থাকে ওই চ্যাটবটের ?

বন্ধুরা যেমন মজার ছলে অনেক সময় কথার উত্তর দেয় সেরকম চেষ্টা করে ভারতে আলোচনার ‘ঝড়’ তৈরি করেছে ইলন মাস্কের সংস্থা এক্সএআই এর তৈরি করা চ্যাটবট ‘গ্রক’।

এক্স (সাবেক টুইটারে) প্ল্যাটফর্মে বিল্ট-ইন সুবিধায় যুক্ত করা হয়েছে এই চ্যাটবট, অর্থাৎ এটি এক্স থেকে সরাসরি ব্যবহার করা যায়।

‘গ্রক’ ডেভেলপকারী সংস্থা এক্সএআই এর দাবি, গ্রকের তীব্র ‘রসবোধ’ রয়েছে। আর ‘গ্রক-৩’ হলো এই চ্যাটবটের সাম্প্রতিকতম উপডেট।

একটি প্রশ্নের সূত্র ধরে ভারতের ডিজিটাল পরিসরে হঠাৎই ‘গ্রক’ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে।

সেই প্রশ্নটা জানতে চাওয়া হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এর ‘টোকা’ নামে এক অ্যাকাউন্ট থেকে।

প্রশ্নটা জটিল কোনো বিষয়ে ছিল না। ‘টোকা’ অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারী ‘গ্রক’কে বলেছিলেন- “এক্স-এ আমার ১০জন বেস্ট মিউচুয়ালের একটা তালিকা বানিয়ে দাও”।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিউচুয়াল বলতে বোঝায়, যে অ্যাকাউন্টগুলো একে অন্যকে ‘ফলো’ করে এবং একে অন্যের পোস্টে ‘কমেন্ট’, ‘লাইক’, ‘শেয়ার’ ইত্যাদি করে।

প্রশ্নের জবাব দিতে দেরি হওয়ায় ‘টোকা’ অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারী ততক্ষণে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। তার মুখ থেকে দু-একটা বেফাঁস কথা বেরিয়ে যায়। ‘গ্রক’ এর পাল্টা জবাবও দেয়।

উত্তর দেওয়ার সময় এক্স অ্যাকাউন্টে দশজন মিউচুয়ালের তালিকা দেওয়ার পাশাপাশি হিন্দিতে বেশ কয়েকটা নারীবিদ্বেষী বা অপমানসূচক শব্দও জুড়ে দেয় ‘গ্রক’।

এক্স হ্যান্ডেলের অন্যান্য ব্যবহারকারীরাও একই পথ অনুসরণ করেন। ‘গ্রক’কে উসকে দেওয়ার জন্য নানান রকম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে থাকেন তারা।

আর তাতেই আগল খুলে যায়। ক্রিকেটের গসিপ, রাজনৈতিক রটনা, বলিউড ড্রামা – সব কিছু নিয়েই এক্স হ্যান্ডেলের ব্যবহারকারী ভারতীয়রা তাকে প্রশ্ন করতে থাকেন। ‘গ্রক’ও সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকে- অকপটে, নিজের শৈলীতে।

সম্প্রতি ভারতে ‘ডিজিটাল সেনসেশন’ (চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী) হয়ে উঠেছে এই চ্যাটবট। অনেকেই একে বর্ণনা করেছেন ‘ফিল্টারহীন’ এবং অনেকটা ‘উন্মত্ত’ চ্যাটবট হিসেবে।

গত বছরই ইলন মাস্ক গ্রককে ‘বিশ্বের সবচেয়ে মজাদার’ এআই বলে সম্বোধন করেছিলেন।

এদিকে, গ্রকের সঙ্গে রসিকতায় মেতে থাকাদের তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হতে থাকে। আইন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এই রসিকতায় যোগ দেয়।

দিল্লি পুলিশের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ‘গ্রক’কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- সে কি কখনও ট্র্যাফিক টিকিট (ট্রাফিক আইন ভাঙার জন্য চালান) পায়নি?

অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, ভারতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংগঠনগুলোর ‘বাকস্বাধীনতা অবরুদ্ধ করা হয়েছে’।

যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ফিউচার অফ ফ্রি স্পিচ’-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাকস্বাধীনতার সমর্থনে থাকা ৩৩টা দেশের তালিকায় ২৪তম স্থানে রয়েছে ভারত।

নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি অবশ্য ধারাবাহিকভাবে এই সমস্ত প্রতিবেদনকে খারিজ করে বাকস্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগকে অস্বীকার করে এসেছেন।

অল্ট নিউজের মি. সিনহা এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “গ্রক নতুন এক বিদ্রোহী। গ্রককে প্রশ্ন করলে কেউ সমস্যায় পড়বে না। দক্ষিণপন্থিরাও রাহুল গান্ধীকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারপর এটা একটা প্রতিযোগিতামূলক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা মোটেও আশ্চর্যজনক নয়।”

“কংগ্রেস না বিজেপি- কে ভালো? এমন প্রশ্নের উত্তরে রাজনৈতিকভাবে সঠিক উত্তর দেওয়ার জন্য প্রোগ্রাম করা হয়েছে অন্যান্য চ্যাটবটগুলোকে। গ্রকের সেই জাতীয় ফিল্টারের অভাব রয়েছে বলে মনে হয় এবং এটা বিতর্কিত বিষয়গুলোর সরাসরি মোকাবিলা করতে ভয় পায় না।

Related Post

Latest News

Exit mobile version