Jay Shree Ram: জয় শ্রী রাম” বাক্যটি একটি রাজনৈতিক বাক্য, এর সাথে কি সনাতন ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই?

হিন্দু হয়েও কেন জয় শ্রীরাম স্লোগানের বিরোধিতা করেন মমতা ব্যানার্জি? জবা ব দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।

 

Mothabari Malda violence বাংলাদেশ পাকিস্থান নয় খোদ ভারতেই ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে মাদ্রাসার উগ্র মৌলবাদীদের হাতে হিন্দু নির্যাতন। কুটোক্তি করা হয় ভগবান রামকে নিয়েও।

Jay Shree Ram:

                শ্রীরামের জয়ধ্বনি ‘জয় শ্রী রাম’ বর্তমানে একটি কথা খুব করে শোনা যায় যে, শ্রীরামচন্দ্রের নামে জয়ধ্বনি বা ‘জয় শ্রী রাম’ বাক্যটি একটি রাজনৈতিক বাক্য, এর সাথে সনাতন ধর্মের সম্পর্ক নেই। পূর্বতন কেউ শ্রীরামচন্দ্রের নামে বর্তমানকালের মতো এভাবে জয়ধ্বনি দিতেন না। শ্রীরামচন্দ্রের নামে জয়ধ্বনিটি হালে তৈরি হওয়া একটি রাজনৈতিক সংগঠনের শ্লোগান প্রভৃতি অনেক কথাই ভারতবর্ষের রাজনীতিবিদ এবং বুদ্ধিজীবীদের পক্ষে শোনা যায়। কিন্তু এ প্রচারণাগুলো সত্য নয়। কথাগুলো রাজনীতিবিদদের একটি সংঘবদ্ধ অপপ্রচার মাত্র।
মহর্ষি বাল্মিকী রচিত রামায়ণেই ভক্ত শ্রীহনুমান কর্তৃক ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের নামে জয়ধ্বনির দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। রামায়ণের সুন্দরকাণ্ডে বর্ণিত হয়েছে, শ্রীহনুমান শ্রীরামচন্দ্রের নামে জয়ধ্বনি দিতে দিতে মহাপরাক্রমশালী রাবনের লঙ্কার বিভিন্ন স্থানে প্রবেশ করে। পবনপুত্র শ্রীহনুমান অতিশয় বিশাল অবয়ব ধারণ করে পুচ্ছ দিয়ে মাটিতে আঘাত করতে করতে লঙ্কানগরীতে ত্রাহি ত্রাহি রব তোলেন। তাঁর পুচ্ছ তাড়নের ভয়ংকর শব্দে ভয়ার্ত হয়ে পাখিরা আকাশ থেকে পতিত হচ্ছিল। এমনি সময়ে শ্রীহনুমান উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করলেন:

জয়ত্যতিবলো রামো লক্ষ্মণশ্চ মহাবলঃ।
রাজা জয়তি সুগ্রীবো রাঘবেণাভিপালিতঃ ।। (রামায়ণ: সুন্দরকাণ্ড, ৪২.৩৩)
মহাবলশালী শ্রীরামচন্দ্র ও লক্ষ্মণের জয় হোক। রঘুপতি শ্রীরামচন্দ্র দ্বারা সুরক্ষিত সুগ্রীবের জয় হোক।”

বাংলার সাথে শ্রীরামচন্দ্রের কোনো সম্পর্ক নেই?

                     সংস্কৃত রামায়ণে শ্রীরামচন্দ্রের নামে জয়ধ্বনি দেয়ার দৃষ্টান্ত থাকার পরেও কিছু বাঙালি বুদ্ধিজীবী জ্ঞানত বা অজ্ঞানত বলে বেড়ান যে, বাংলার সাথে শ্রীরামচন্দ্রের কোনো সম্পর্ক নেই, তাই তাঁর নামে জয়ধ্বনির সাথে বাঙালি সংস্কৃতির কোনো প্রকারের সম্পর্ক নেই। কথাগুলো অত্যন্ত হাস্যকর। এদের যে বাঙালি সাহিত্য, সংস্কৃতি ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে খুব একটা ধারণা তা তাদের ইলেকট্রনিক বা প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত তাদের কথাবার্তাতেই উপলব্ধি করা যায়। তবে আশাব্যঞ্জক একটি বিষয় হল যে, এদের পক্ষে খুব একটা জনসমর্থন নেই বললেই চলে। রাজনৈতিক উষ্ণুজীবী গুটিকয়েক বুদ্ধিজীবীদের এমন ইতিহাসের সাথে সম্পর্কহীন বয়ান দিতে শোনা যায়। এদের প্রধান লক্ষ্যই তোষণ বা তুষ্টিকরণের রাজনীতি।
তবে এ উষ্ণুজীবী গুটিকয়েক বুদ্ধিজীবীদের বয়ানকে প্রেরণা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তো শ্রীরামচন্দ্রের নামে জয়ধ্বনি বা ‘জয় শ্রী রাম’ বাক্যটি শুনতে পেলেও চলন্তগাড়ি থেকে নেমে যে বা যারা জয়ধ্বনি দিয়েছে তাদের পিছে ধাওয়া করেন। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর মতো দায়িত্বশীল একটি পদে থেকে অত্যন্ত অশোভনীয়। জয় শ্রীরাম বাক্যের বিরোধিতা করতে করতে বিষয়টিকে তিনি অভব্যতা এবং দৃষ্টিকটুতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন।
ঈদে রেডরোডে অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী
কিন্তু শ্রীরামচন্দ্রের নামে জয়ধ্বনি দেয়া কি শুধুই উত্তর বা পশ্চিম ভারতীয় সংস্কৃতি? পূর্বকালে বাংলায় কী শ্রীরামচন্দ্রের নামে জয়ধ্বনি দেয়া হত না? উত্তর সরল এককথায় উত্তর -হ্যাঁ হত, অবশ্যই হতো। এর দৃষ্টান্ত আমরা অনেক পুরাতন বাংলা গ্রন্থেই পাই। মধ্যযুগের অনেক বাংলা গ্রন্থেই শ্রীরামচন্দ্রের নামে জয়ধ্বনির কথা বর্ণিত আছে। মধ্যযুগে অর্থাৎ খ্রিস্টীয় ১৪শ-১৫শ শতাব্দীতে পয়ার এবং ত্রিপদী ছন্দে রচিত হয় কৃত্তিবাসী রামায়ণ বা শ্রীরাম পাঁচালী। এর রচয়িতা বিখ্যাত বাঙালি কবি কৃত্তিবাস ওঝা। সেই কৃত্তিবাসের লিখিত রামায়ণের লঙ্কাকাণ্ডে আমরা দেখতে পাই, বানর সেনারা বহুরূপী শক্তিধর রাক্ষসসেনার সাথে শ্রীরামচন্দ্রের নামে জয়ধ্বনি দিয়ে, তবেই সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হচ্ছে। তারা উচ্চস্বরে শ্রীরামচন্দ্রের জয় বলে তবেই রাক্ষস সৈন্যের উপরে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে। ঝাপিয়ে পড়ে যুদ্ধক্ষেত্রের বৃক্ষ উপড়িয়ে বড় বড় পাথর উপড়িয়ে চারিদিক অন্ধকার করে ফেলছে।

রামজয় শব্দ করে ধাইল বানর।
বানর দেখিয়া রোষে যত নিশাচর।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ: লঙ্কাকাণ্ড, ২৫২৬)

রামজয় শব্দ করে যতেক বানরে।
অন্ধকার ক’রে ফেলে বৃক্ষ ও পাথরে ।।
(কৃত্তিবাসী রামায়ণ: লঙ্কাকাণ্ড, ২৫৫০)

তাই একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে শ্রীরামচন্দ্রের নামে জয়ধ্বনির বিষয়টি বাঙালি সংস্কৃতির কোন নবীন বিষয় নয়। বিষয়টি অত্যন্ত পুরাতন। তাই এ বিতর্কহীন বিষয়টিকে বিতর্কের ময়দানে টেনে এনে মানুষের বিশ্বাস, ভক্তি এবং ভাবনার বিষয়টিকে অহেতুক ক্ষত করার প্রচেষ্টা অনর্থক। এ কুরুচিপূর্ণ বিষয়টি যারা করছে, তাদের ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থেই করছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি তাদের সুমতি কামনা করি। আশাকরি তারা তাদের ভুল উপলব্ধি করতে পারবে।

এক ধ্বনি এক নাম,
জয় শ্রীরাম! জয় শ্রীরাম!

শ্রীরামের নামে এগিয়ে চল,
সত্য ও সুন্দরের ধ্বজা ধর।
হৃদয়ের মাঝে একটি নাম,
জয় শ্রীরাম! জয় শ্রীরাম!
ভুলতে পারি নিজের নাম
তবুও ভুলি না জয় শ্রীরাম!

তথ্য সহায়তা:
১. মহর্ষি বাল্মিকী, শ্রীমদবাল্মিকীয় রামায়ণ, (দ্বিতীয় খণ্ড) গীতাপ্রেস, গোরক্ষপুর, তৃতীয় সংস্করণ, ২০২২
২. কৃত্তিবাসী রামায়ণ, গীতাপ্রেস, গোরক্ষপুর: ২০২১
ড. শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,
সংস্কৃত বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

                                 #jayshreeram #mamatabanarjee #banglanews #dhakanews #TMC #BJP #kolkata

Related Post

Latest News